সংবাদ শিরোনাম
উড়াল গ্যাসে যে কোন মূহুর্তে উড়ে যেতে পারে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ ; এখনিই লাগাম ধরতে হবে কর্তৃপক্ষের

উড়াল গ্যাসে যে কোন মূহুর্তে উড়ে যেতে পারে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ ; এখনিই লাগাম ধরতে হবে কর্তৃপক্ষের

স্টাফ রিপার্টার//সময়নিউজবিডি  

উড়াল গ্যাসে যে কোন মূহুর্তে উড়ে যেতে পাড়ে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ। এখনিই লাগাম টেনে ধরতে হবে কর্তৃপক্ষের। তা-না হলে প্রতিনিয়ত প্রাণহানির ঝুকি বেড়েই চলবে। 
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ বিপদজনক উপায়ে উড়াল গ্যাস ব্যবহারের ফলে এমন প্রাণহানির শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনেরা। 
জানা যায়, সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের বাকাইল গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির নলকূপ ও জমির মাটি ভেদ করে উদগীরণকৃত গ্যাস (পকেট গ্যাস/উড়াল গ্যাস) বিপদজনক উপায়ে ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
অভিযানকালে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম এবং সদর উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিল্লাল আহমেদের অবৈধ চুন ফ্যাক্টরীসহ ১৫টি চুন ফ্যাক্টরীর অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় ঐ গ্রামের প্রায় ৫ শতাধিক আবাসিক অবৈধ গ্যাসের সংযােগ, ৮/১০টি হােটলের বাণিজ্যিক গ্যাস সংযােগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ সময় ভ্রাম্যমান আদালত বিভিন্ন উপর দিয়ে গ্যাস সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত প্রায় ২০ হাজার মিটার প্লাষ্টিকের পাইপ এবং ১শত ২০ ড্রাম ধ্বংস করেন।

সদর উপজলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রট পঙ্কজ বড়ুয়ার নেতৃত্বে গত বৃহস্পতিবার মজলিশপুর ইউনিয়নের কয়েকটি স্থানে অভিযান চলাকালে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) এ.বি.এম মশিউজ্জামান, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ৬জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কােম্পানীর ডিজিএম জাহিদুর রেজা, বিজিএফসিএলর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (উৎপাদন) জাকির হােসেন তরফদার, ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ। 
সরজমিন ঘুরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত প্রায় ১৫ বছর ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের বাকাইল গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির নলকূপ ও জমির মাটি ভেদ করে  গ্যাস উদগীরিত হচ্ছে। গ্রামবাসী এই গ্যাস প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে বাড়িতে নিয়ে রান্নার কাজে ব্যবহার করছেন। রাস্তার পাশে থাকা গাছের উপর দিয়ে এই গ্যাস প্লাস্টিক পাইপের মাধ্যম  বিভিন্ন গ্রামে সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব অবৈধ গ্যাস লাইন সংযোগে সরকারদলীয় কয়েকজন স্থানীয় নেতাকর্মী জড়িত আছেন। 

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বেশ কয়েক বছর ধরে মজলিশপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ও সদর উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিল্লাল আহমেদের নেতৃত্বে বাকাইল গ্রামে ১৫টি অবৈধ চুন ফ্যাক্টরী গড়ে উঠেছে। এসব চুন ফ্যাক্টরীতে ব্যবহার করা হচ্ছে মাটি ভেদ করে উদগীরিত গ্যাস (পকেট গ্যাস)। এছাড়া গ্রামের আরেকটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট এই গ্যাস প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে মজলিশপুর, সুহিলপুর ও বুধল ইউনিয়নের কয়েক হাজার বাড়িতে অবৈধভাবে সংযােগ দিয়েছে। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতি চুলা থেকে প্রতি মাসে ৫শত টাকা করে আদায় করছে। যা চলে যাচ্ছে সিন্ডিকেটের পকেটে।  

বড় বাকাইল গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, গ্রামের নূর মিয়া, মাঈনুদ্দিনসহ ৬/৭জন এই অবৈধ গ্যাসের ব্যবসা করে প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। প্রতি গ্রাহক মাসে ৫শত টাকা গ্যাস বিল দিতে হয়। 
মজলিশপুর গ্রামের এক নারী জানান,আমরা অসহায়। আমাদের প্রয়োজনে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কাছ থেকে এসব অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়েছি। তিনি বলেন প্রভাবশালী লোকজন এ ব্যবসা করেন। প্রভাবশালী বলতে কারা জানতে চাইলে ঐ নারী এ প্রতিবেদককে জানান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, সদর উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিল্লাল আহমেদ, কাশেম মিয়া, আলী মিয়া, নানু মিয়াসহ ১৫/১৬জন চুনের ফ্যাক্টরী গড়ে তুলেছেন। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি অবৈধভাবে গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ করতে না পারে তাহলে যে কােন সময় এই গ্রামে ঘটতে পারে ভয়াবহ দূর্ঘটনা। যা হাজার হাজার মানুষেরও প্রাণহানি হতে পারে।    
এদিকে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) সূত্রে জানা যায় , ২০০৩ সাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৩নং গ্যাস ফিল্ডের কূপে সমস্যা হয়। ওই সময় প্রায় ২হাজার ফুট মাটির নিচ দিয়ে গ্যাস লিকেজ হয়। পরে কুপে গ্যাসের প্রেসার কমতে থাকে। ২০০৬ সালে কুপ থেকে বের হওয়া গ্যাস গ্রামের বিভিন্ন দিক দিয়ে বাড়তে থাকে। 

বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কােম্পানীর ডিজিএম (বিতরণ) জাহিদুর রেজা বলেন, এটা পকেট গ্যাস। আগামী এক-দুই বছরের মধ্যেই এই গ্যাস উদগীরণ বন্ধ হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্ব থাকা কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন বলেন, এটি ঝুঁকিপূর্ন এলাকা। বিষয়টি আমি উর্ধতন কর্মকর্তাদেরকে অবগত করেছি। 
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।    

সংবাদটি পছন্দ হলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017 Somoynewsbd24.Com